জন্ডিস হলে করনীয় কি সেটি জানার আগে, চলুন যেনে আশি জন্ডিস কি আসলে রোগ তাহলে কেন জন্ডিস হয়। আসলে জন্ডিস কোন রোগ নয়। এটি লিভারের ইনফেকশন বা হেপাটাইটিস এর কারনে হয়ে থাকে।
জন্ডিস রোগের লক্ষণ মাত্র, এটি নিজে কোন রোগ নয়। লিভারের যেকোনো জটিলতার কারণে চোখ হলুদ হওয়া, প্রস্রাব হলুদ হওয়া, খাওয়ায় অরুচি, মুখগহ্বর হলুদ হওয়া এবং কারো কারোর ক্ষেত্রে চামড়া প্রযন্ত হলুদ হয়ে যাওয়া। এটাকে জন্ডিসের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
জন্ডিস কেন হয়
জন্ডিস কেন হয় তার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল গিলবার্ট সিন্ড্রোম, যা বিলিরুবিনকে ভেঙে এনজাইমের নিম্ন স্তরের দ্বারা চিহ্নিত করে। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ভাইরাল হেপাটাইটিস, হেমোলাইটিক ডিসঅর্ডার এবং কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ।
বিলিরুবিন সাধারণত যকৃতের মধ্য দিয়ে পিত্তে যায় যেখানে এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়। জন্ডিস হল রক্তে বিলিরুবিন জমা হওয়ার কারণে ত্বকের হলুদ বর্ণের বিবর্ণতা। এই অবস্থা নবজাত শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের প্রভাবিত করতে পারে, যাদের যকৃতের রোগ আছে। জন্ডিস সাধারণত ২ সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা বা চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
জন্ডিস সাধারণত ২ কারণে হয়ে থাকেঃ
১) ভাইরাস জনিত কারণে, যেমন—
- হেপাটাইটিস-এ
- হেপাটাইটিস-বি
- হেপাটাইটিস-সি
- হেপাটাইটিস-ডি
- হেপাটাইটিস- ই
হেপাটাইটিস বি ও সি সবচেয়ে মারাত্মক।বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি তে ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত।
তবে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস-এ ও ই সবচেয়ে বেশী হয়।এগুলো স্বল্পমেয়াদী লিভার রোগ। বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যায়।বাকী গুলোর জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট নিতে হবে।
২) ভাইরাসের বাইরের কারণ, যেমন—
- লিভারে টিউমার হলে
- লিভার ক্যান্সার হলে
- পিত্তনালিতে পাথর হলে
জন্ডিস এর লক্ষণ কি
জন্ডিস রোগের লক্ষণ কি হলে আপন বুঝবেন যে আপনার জন্ডিস হয়েছে। জন্ডিস রক্তে বিলিরুবিনের (হলুদ রঙ ধারন) অতিরিক্ত মাত্রার কারণে এটি ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যায়। যকৃতের দ্বারা উৎপন্ন পিত্তের পরিমাণ এবং অন্ত্রে নির্গত পিত্তের পরিমাণের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার কারণে জন্ডিস হয়।
জন্ডিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, গাঢ় প্রস্রাব, ফ্যাকাশে মল এবং চোখ এবং ত্বক হলুদ।
লিভারের এবং পিত্তের ভারসাম্যহীনতার কারণে বা জন্ডিস হলে যে যে লক্ষন দেখা যাই তা হলো – লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে গাঢ় প্রস্রাব, ফ্যাকাশে মল এবং হলুদ চোখ।
- চোখ হলুদ হওয়া,
- প্রস্রাব হলুদ হওয়া,
- খাওয়ায় অরুচি,
- মুখগহ্বর হলুদ হওয়া
- চামড়া প্রযন্ত হলুদ হয়ে যাওয়া।
সাধারণত রোগীর ৪০ বছর বয়সের নিচে যারা তাদেরকে ভাইরাসজনিত জন্ডিস ধারণা করা হয়। আর রোগীর বয়স ৪০ এর বেশি হলে তাকে ভাইরাসের বাহিরের কারণকে সন্দেহ করা হয়।সাধারণত জন্ডিসে শরীরের বিলিরুবিন বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ জন্ডিসে আক্রান্ত হলে বিভিন্ন ল্যাব টেস্ট দেন, যাতে রোগের কারণ ও তীব্রতা সর্ম্পকে ধারণা পাওয়া যায়।
জন্ডিস হলে করনীয় কি
জন্ডিস হলে করনীয় হলো প্রথমে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন এবং আপনি বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি এবং ভিটামিল সি জাতীয় খাবার খাবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি বেশি বিশ্রাম নেবেন। কারন, জন্ডিস সাধারণত ২ সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা বা চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
জন্ডিস টেস্ট নাম
জন্ডিস হলে অনেকগুলো টেস্ট করতে হয় তার মধ্যে কিছু টেস্ট আছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জন্ডিসের গুরুত্বপূর্ণ টেস্টের নাম হলঃ জন্ডিস টেস্ট নাম নিচে দেয়া হয়েছে।
- সিরাম বিলিরুবিন
- সিরাম বিলিরুবিন (সরাসরি) (শিশু)
- সিরাম বিলিরুবিন (পরোক্ষ) (শিশু)
- এসজিপিটি
- এসজিওটি
- ক্ষারীয় ফসফেটেস (ALP)
- সিবিসি
- প্রস্রাব R/E
- ইউরোবিলিনোজেনের জন্য প্রস্রাব
জন্ডিস টেস্ট কত টাকা
জন্ডিস টেস্ট কত টাকা এটি বলতে গেলে আসলে জন্ডিস টেস্ট ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা নেয়া হয়। তবে জন্ডিস পরীক্ষা করার সময় ব্লাড টেস্ট এবং অন্যান্য পরিক্ষা করা হতে পারে তাই আপনাকে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে থেকে ৩০০ টাকা বা এর বেশি হতে পারে। তবে এটি হাসপাতাল এবং আপনার পরীক্ষার উপর নির্ভরশীল।
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা হলো সবজি জাতীয় খাবার যেমন: টমেটো, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কুমড়ো, আলু, মুলা, বীটরুট, গাজর, এবং পালং শাক জন্ডিস রোগীদের জন্য খুবই ভালো।
জাতীয় খাবার যেমন: ফল: সহজে হজম হয় এমন ফল যেমন কমলা, জলপাই, ভো অ্যাকাডো, বেরি, পেঁপে, তরমুজ, আনারস, পেঁপে, কলা, আঙুর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তৈরি করা উচিত। দুগ্ধজাত পরামর্শ: ফুল ক্রিম দুধ বা দই, পনিরের মতো, জন্ডিসের জন্য ভালো নয়।
আরো পড়ুনঃ
ইউরিন টেস্ট কী এবং কেন করা হয়?
জন্ডিস কি বাহিত রোগঃ জন্ডিস কি পানিবাহিত রোগ, আসলে জন্ডিস কোন রোগ নয়। আসলে জন্ডিস হয়ে থাকে ভাইরাল হেপাটাইটিস, হেমোলাইটিক ডিসঅর্ডার এবং কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ এর কারনে।